Sadaf khadem[অনুপ্রেরণা] EP14

Share:

Listens: 0

Filmifootage

Arts


সাদাফ খাদেম (এক বঞ্চিত মেয়ের জীবন কাহিনি) দেশের হয়ে যদি কোন‌ও খেলোয়াড় পদক জেতে তা তো তার পক্ষে গৌরবের হয়‌ই, সেই সঙ্গে সে তার দেশকেও গর্বিত করে। আন্তর্জাতিক আসরে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করলে দেশবাসী উন্মুখ হয়ে তাকিয়ে থাকে তার পারফরমেন্সের দিকে। হতভাগ্য সাদাফ খাদেম তার প্রথম আন্তর্জাতিক লড়াইটা জেতার পর সেই রকমই হয়তো ভেবেছিল। কিন্তু হায়! তারপর থেকেই সে ভয়ে কাঁটা হয়ে আছে। ব্যাপারটা তাহলে খুলেই বলা যাক। সাদাফ খাদেম একজন ইরানি মেয়ে। যার কাহিনি যে কোন‌ও সিনেমাকেও হার মানাবে। খাদেম ছিল আর পাঁচটা ইরানি মেয়ের থেকে আলাদা। তার মা ইরানের এক নারীবাদী মহিলা। আর তাঁরই অনুপ্রেরণায় খাদেম ছিল অনুপ্রাণিত। তাদের পরিবার ইরানের এক অভিজাত ধনী পরিবার। ইচ্ছে করলে আর পাঁচটা সাধারণ মেয়ের মতো দিব্যি জীবনটা কাটিয়ে দিতে পারত। কিন্তু, ওই যে কথায় আছে না, সুখে থাকতে ভুতে কিলোয়। তার অবস্থাও হল সেই রকমই। ভারতীয় মহিলা বক্সার মেরি কমের ভাবশিষ্য মেয়েটি টুকটাক বাস্কেট বল খেলত। ভাবশিষ্য বলছি কেন? তার কাছ থেকেই জানা গেছে যে ২০১২ সালের লন্ডন অলিম্পিকে ব্রোঞ্জ পদকের জন্য মেরির লড়াই সে দেখেছিল টিভিতে। আর সেই লড়াই দেখার পর‌ই মেয়েটির ধ্যানজ্ঞান হয়ে উঠল। স্বপ্ন দেখতে শুরু করল যে সে দেশের হয়ে বক্সিংয়ে অলম্পিক পদক জয় করবে। কিন্তু স্বপ্ন দেখলেই তো হল না, সেই স্বপ্ন পূরণ করার পরিবেশ এবং পরিকাঠামোও তো চাই। ইরানে তো মেয়েদের বক্সিংয়ের অনুমতিই নেই। মেয়েটি বারবার দেখা করল ইরানের বক্সিং ফেডারেশনের প্রধানের সঙ্গে। তাকে বোঝানোর চেষ্টা করল যে কিক-বক্সিং, ক্যারাটে, জুডো বা কুস্তিতে যদি মেয়েরা অংশ নিতে পারে তবে বক্সিংয়ে অনুমতি পাবে না কেন? কিন্তু তার দুর্ভাগ্য যে বরফ গলল না। কিন্তু বক্সার তো তাকে হতেই হবে। একজন কোচের সন্ধান পাওয়া গেল। লুকিয়ে চুরিয়ে চলল প্র্যাকটিশ। কিন্তু সেই কোচ নির্জনতার সু্যোগ নিতে চাইলে তাকে দূর করে দিল মেয়েটি। এরপর খোঁজ পাওয়া গেল মাহিয়ার মনসিপোরের। প্রাক্তন ব্যান্টম‌ওয়েট চ্যাম্পিয়ান মনসিপোরের জন্ম ইরানে। তিনি ইরান এবং ফ্রান্স দুই দেশেরই নাগরিক। তার‌ই তত্ত্বাবধানে চলল সাধনা, তবে অবশ্যই প্রকাশ্যে নয়। প্র্যাকটিসের জন্য যে জায়গা ঠিক হলেই সেখান থেকে আসছে প্রবল বাধা। শেষে মেয়েটি তার নিজের গ্যারাজেই একটা প্র্যাকটিশ এরিনা বানিয়ে নিল। এর‌ই মধ্যে মেয়েটা মাঝেমাঝেই চলে যেত ফ্রান্সের রোয়ান শহরে। সেখানেও হত চুটিয়ে প্র্যাকটিশ। অবশেষে এল সেই শুভক্ষণ। ২০১৯ সালের ১৪ এপ্রিল একটি আতর্জাতিক প্রতিযোগিতায় মেয়েটি মুখোমুখি হল ফ্রান্সের অ্যান চৌভিনের। ততদিনে চৌভিন অনেকগুলো প্রতিযোগিতায় অংশ নিয়ে নিয়েছে। আর অন্যদিকে খাদেম একেবারে আনকোরা। লড়াইয়ের কোন‌ও অভিজ্ঞতাই তার নেই। কিন্তু তার ছিল অদম্য সাহস আর দেশের জন্য কিছু করে দেখানোর জেদ। ইরানের জাতীয় পতাকার রঙে, অর্থাৎ সবুজ ভেস্ট লাল শর্টস আর সাদা কোমরবন্ধ, নিজেকে সাজিয়ে উঠে গেল বক্সিং রিং-এ। আর কী আশ্চর্য! জীবনের প্রথম প্রতিযোগিতায়, তাও আবার আন্তর্জাতিক, যোগ দিয়েই পেয়ে গেল সাফল্য। লড়াই জেতার পর সে তার এই জয় উৎসর্গ করল সেই সব ইরানিদের প্রতি যাঁরা দেশের জন্য প্রাণ দিয়েছেন। সে বলল, 'This victory belongs to all the men and women who sacrificed their life for Iran. আনন্দে উদ্বেল সাদাফ খাদেম দেশে ফিরবে সঙ্গে তার প্রশিক্ষক মাহিয়ার মনসিপোর। মানসপটে দেখতে পাচ্ছে কীভাবে ইরানের মানুষ তাকে সংবর্ধনা জানাচ্ছে। কিন্তু শার্ল দ্যগল এয়ারপোর্টে এসেই শুনল যে তার বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি হয়েছে। বিমান তেহরানের মাটি স্পর্শ করলেই তাকে গ্রেফতার করা হবে। কী অভিযোগ তার বিরুদ্ধে? আভিযোগ গুরুতর। সে সর্বসমক্ষে ভেস্ট আর শর্টস পরে খেলতে নেমেছিল। তদুপরি তার পরনে হিজাব‌ও ছিল না। আর তার সঙ্গে ছিল তার কোচ যে তার স্বামী নয়। অবশ্য ইরানের কর্তৃপক্ষ এই গ্রেফতারি পরোয়ানার কথা স্বীকার করেনি আর ইরানের বক্সিং ফেডারেশনের প্রধান হোসেন নুরি জানিয়ে দিয়েছেন যে ইরানে মেয়েদের বক্সিং স্বীকৃত নয় তাই তার এবং তার প্রশিক্ষকের কাজের দায়িত্ব তাদেরকেই নিতে হবে। ফলে খাদেমের দেশে ফেরা হয়নি। সে আছে ফ্রান্সেই। আর চালিয়ে যাচ্ছে প্র্যাকটিস। পাখির চোখ এখন শুধু ২০২৪ এর অলিম্পিকের দিকে। তাকে প্রশ্ন করা হয়েছিল অলিম্পিকে সে কোন দেশের প্রতিনিধিত্ব করতে চায়। তার উত্তর, 'আমি একজন ইরানি। আমি আমার দেশ এবং সংস্কৃতির প্রতি শ্রদ্ধাশীল। আমি চাইব ইরানের প্রতিনিধিত্ব করতে। তবে যদি তা সম্ভব না হয় তবে আমি আমার সেকেন্ড হোম ফ্রান্সের হয়েই লড়তে চাই। সাদাফ খাদেম কোন দেশের প্রতিনিধিত্ব করে তা দেখার জন্য আমাদের ২০২৪ প্যারিস অলিম্পিক পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে। --- This episode is sponsored by · Anchor: The easiest way to make a podcast. https://anchor.fm/app --- Send in a voice message: https://anchor.fm/filmi-footage/message